শাড়ি আমার
– তুলি মণ্ডল
সে কথা মনে পড়লে বুকে ব্যথা করে ভারী,
যদিও তখন ছোটোই তবুও আমার একটি মাত্র শাড়ি।
আমার বয়সীরা কোথাও গেলে পরে যায় সুন্দর ফ্রক,
একখানা কিনে দাওনা মা করেছি কত বকবক।
মা আমায় বুঝিয়ে বলে জানিসই তো সব কীভাবে চলে,
তোর বাবা তো গেলই চোলে আমাদের একলা ফেলে।
কত কেঁদেছি মায়ের চোখের আড়ালে হয়ত মাও তাই,
দুঃখকে লুকিয়ে রেখে সব নেমন্তন্ন বাড়ি ওই শাড়ীটাই পরে যাই।
মনে আছে আমার দাদা বলেছিল ফ্রকই কিনে দেবে,
বৌদি বললো ওতো বড়ো হচ্ছে শাড়ীটাই ঠিক হবে।
দাদা যখন স্ত্রী সন্তান নিয়ে চলে গেল শহরে,
বলে গেল চিন্তা করোনা তোমরাও যাবে কদিন পরে।
এল না আর সেইদিন হলো না আর দাদার বাড়ি যাওয়া,
শুরু করলাম কষ্টগুলো ভুলে গিয়ে শান্তির গান গাওয়া।
দোকান পাট হাট বাজার প্রায় দুই কিমি পথ দূরে,
আমিই যেতাম বাজার করতে লাল মরামের রাস্তা ধরে।
দু’হাতে থাকত চালের ব্যাগ বিক্রি করবো বলে,
গাছের তেঁতুল ও নিতাম কখনও বেশি পয়সা দরকার হলে।
দিদি বলে আমিও তো রোজ এক শাড়িতেই কলেজে যাই,
তোকে অনেক শাড়ি দেব আগে আমি চাকরিটা তো পাই।
পড়াশোনা শেষ করার আগেই দিদির হল বিয়ে
সু-পাত্রের সাথে, মায়ের জমি বিক্রির টাকা দিয়ে।
সেদিন করিনি কোনও আবদার, কাজল লিপস্টিক চুড়ি,
দিয়েছিল মা নিজেই কিনে আর সুন্দর একখানা শাড়ি।
সবাই বললো আর কাঁদবি না তো,ধরবি না আর বায়না,
ওরা কি বোঝে না আগের শাড়িটা আর পরা যায় না!
দিন কাটছিল বেশ, অভাবে অনটনে খুশিতে মেয়ে ঝিয়ে,
আবার এল সময় জমি বিক্রির, আমার হল বিয়ে।
স্বামীর কিছু বদ অভ্যাস আছে বৈকি তবে মানুষ খুবই ভালো,
আমার সুখের প্রদীপটা মা, ঘর করেছে আলো।
জন্মদিন, বিবাহবার্ষিকী, দুর্গাপূজা আরো কত উৎসব হলে,
হাতে তার থাকে ঠিক একখানা শাড়ি কোনোদিন যায়নি ভুলে।
জানো মা আলমারি খুললেই আমার ভীষণ কান্না পায়,
চেষ্টা করি কিন্তু অতীতকে কি কোনোদিন ভোলা যায়!
সুন্দরী নই, শিক্ষিতা নই, আমি অত্যন্ত সাধারণ এক নারী,
একটা মাত্ৰ নয় আজ আমার অনেক অনেকগুলো শাড়ি।।